আপনার কাছে পুরাতন মুদ্রা ও নোট রয়েছে ? কিভাবে বিক্রি করবেন জেনে নিন

 প্রায় সবার কাছেই কিছু না কিছু পুরাতন কয়েন বা ব্যাংক নোট দেখতে পাওয়া যায় । অনেক আগে পুরাতন জিনিসপত্র সংগ্রহ করা হতো শখের বশে কিন্তু অনলাইনে বিভিন্ন ধরণের এন্টিক সাইটের কল্যাণে এগুলি চড়া দামে বিক্রি করা যায় । আমার মনে আছে, দেড়শ বছর আগের একটা ব্রিটিশ মুদ্রা অনলাইনের একটা সাইটে লিস্টিং করে প্রায় ৮০ হাজার টাকা বা এক হাজার ডলারের মত বিক্রি করেছিলাম । সেবারই সর্বপ্রথম আমি কয়েন বিক্রি করি । কয়েন বা পুরাতন মুদ্রা বিক্রি করার কোন জ্ঞান তখন ছিল না । কিভাবে বিক্রি করতে হয় সেই ব্যাপারে আমি ভিডিও করেছিলাম তিন বছর আগে কিন্তু সেটা অনলাইনে বিক্রি করার একটা সাইটের ভিডিও ছিল । 

বাংলাদেশী মুদ্রা ও নোট


সময়ের পরিক্রমায় এখন কয়েন বাই সেল নিয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান রয়েছে । মজার ব্যাপার হল, একদম কাকতালীয়ভাবে সেই কয়েন বিক্রি করি বেশ চড়া দামে । 

বিশ্ব অর্থনীতির নাজুক পরিস্থিতি, যুদ্ধ-বিগ্রহের ফলে মানুষজন দরকারি জিনিস ছাড়া তেমন কিছু ক্রয় করছে না । আপনি যখন বিপদে থাকবেন তখন ফুর্তি করার পেছনে কিংবা শখ পূরণে অর্থ ব্যয় করবেন না । অর্থনীতির এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা অধ্যায় । এই পোস্টে অর্থনীতি ব্যাখ্যা করবো না । বরং সরাসরি কয়েন বিক্রির নিয়ম-কানুন আলোচনা করবো । 

আপনার কাছে ব্রিটিশ, পাকিস্তানি, বাংলাদেশী বিলুপ্ত কয়েন, মুঘল, সুলতানি, অটোমান কিংবা বিভিন্ন প্রাচীন স্বর্ণ, রৌপ্য, তামা, দস্তার মুদ্রা বা বাংলার প্রাচীন কড়ি (৫,১২০ কড়ি = ১ রুপি) থাকতে পারে কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে কয়েন বিক্রির কমন একটা নিয়ম রয়েছে । এর ব্যাত্যয় ঘটলে কয়েন যত দামীই হোক না কেন সেটা সৌখিন লোকেরা কিনবে না বরং জাদুঘরে জায়গা হবে । জাদুঘর কোনকিছু ক্রয় করে না বরং যার কাছ থেকে উদ্ধার হয় তার পরিচয় নেমপ্লেটে প্রদর্শন করে সেটা শোকেসে সাজিয়ে রাখে, দাতার প্রাপ্তি এতটুকুই । 


কয়েন বিক্রি করার জন্য নিচের নিয়মগুলি ভালোভাবে মনে রাখতে হবে

  • কয়েনে কোন আঁচড় দেয়া যাবে না ।
  •  কয়েনের খাঁজে কোন ময়লা জমে থাকলে ঘষে তুলতে চেষ্টা করবেন না । বরং কেমিক্যালে ডুবিয়ে সেটা পরিষ্কার করতে হয় । জং পরিষ্কারের কেমিক্যাল ব্যবহার করতে হয় । 
  • কয়েনের গায়ে বিভিন্ন সন, পিরিয়ড ইত্যাদি উল্লেখ থাকে । এগুলি ক্ষতিগ্রস্থ হলে সেই কয়েন বিক্রি অযোগ্য । 
  • কয়েনে চাপ লেগে বাঁকা হলে বিক্রি অযোগ্য হবে ।  
মোটকথা, আপনার কাছে যে কয়েন রয়েছে তাতে স্ক্রাচ থাকলে বিক্রি করার আশা বাদ দিতে হবে । আপনি ভাবতে পারেন পুরাতন কয়েনে বিভিন্ন দাগ থাকতে পারে এটা স্বাভাবিক । তবে যারা ক্রয় করে তারা এসব মানতে চায় না এবং ক্রেতার চাহিদামতই আইন তৈরি করা হয় । 


কয়েন কোথায় বিক্রি করবেন ? 

অনলাইনে নানারকম সাইট রয়েছে যেখানে কয়েনের ছবি পাঠালে তারা যাচাই করে এবং বিক্রি যোগ্য হলে তারাই আপনাকে জানিয়ে দিবে এবং সেটা বিক্রি করার পর আপনাকে কুরিয়ারের মাধ্যমে কয়েন পাঠিয়ে দিতে হবে এবং তারা ট্যাক্স কেটে নিয়ে টাকা পরিশোধ করবে । তবে যতগুলি সাইট মার্কেটে একটিভ ছিল তারা কেউই বর্তমানে সচল নেই । তারা কয়েন কিনছে না । আপনি যদি তাদের মেইল করেন তাহলে আপনি রিপ্লাই পাবেন যদি আপনার কয়েনের মুল্য থাকে নয়ত মেইলের জবাব পাবেন না । যেহেতু অনলাইন সাইটগুলি বর্তমানে কয়েন ক্রয় করছে না সুতরাং কিভাবে কয়েন বিক্রি করতে পারবেন ? 

সেজন্য eBay তে যোগাযোগ করতে পারেন । 

ই-বেতে মুদ্রা কেনাবেচা

এখানে অ্যাকাউন্ট করে সংগ্রহে থাকা কয়েনের ছবি তুলে বিক্রির জন্য পোস্ট করতে পারেন । কেউ আগ্রহী হলে আপনার কাছ থেকে মুদ্রা কিনে নিবে । এছাড়াও আরেকটা পদ্ধতি রয়েছে । এই নিয়মে আপনার কাছে থাকা সবগুলি কয়েনের ছবি তুলে, কয়েনের সময়কাল ও কোন সরকারের আমলে তৈরি হয়েছে এগুলি সম্বলিত তথ্য অনলাইন থেকে সংগ্রহ করে কয়েনের পোর্টফলিও ওয়েবসাইট বানাতে হবে । তারপর সেই সাইট ভালোভাবে এসইও করতে হবে । যারা ভিজিটর রয়েছে তারা আপনার সাইট থেকে কয়েন ক্রয় করতে পারে । এগুলি হল আন্তর্জাতিক পদ্ধতি যা আপনি একা একা করতে পারবেন ।

এছাড়াও ফেসবুকে বিভিন্ন কয়েন বাই সেলের গ্রুপ রয়েছে যেখানে কয়েন বিক্রি করতে পারেন । এছাড়াও ভারতের কলকাতায় একটা কয়েন মেলা হয় বছরের শুরুতে । তখন যাদের কাছে কয়েন থাকে কিংবা যারা মিডলম্যান থাকে তারা ফেসবুক কিংবা বিভিন্ন ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে মার্কেট থেকে কয়েন ক্রয় করে কিংবা চুক্তিভিত্তিতে সংগ্রাহক থেকে কয়েন নিয়ে সেগুলি মেলায় বিক্রি করে কমিশন আদায় করে । বর্তমানে এভাবেই কয়েন কেনা-বেচা হয়ে থাকে । যেহেতু এটা ভোগ্য পণ্য নয় সুতরাং আপনি বাজারে তুললেই বিক্রি হয়ে যাবে এমনটা ভাবার কারণ নেই । কারণ একই কয়েন একাধিক মানুষের কাছে রয়েছে । অন্যদিকে ঢাকার নিউমার্কেট, গুলশানে কিছু পুরাতন কয়েনের দোকান রয়েছে যারা কয়েন বেচাকেনা করে । তাদের সাথেও যোগাযোগ করতে পারেন যদি তারা আপনার কয়েন দেখে পছন্দ করে আর কি ! 

 

আমি যে কয়েনটা বিক্রি করেছিলাম সেটা ছিল ব্রোঞ্জের কয়েন কিন্তু এত দামে বিক্রি হওয়ার কারণ কি ছিল ? 

তখন ভেবেছিলাম প্রাচীন কয়েন মানেই দামী এবং সেটা অনেক টাকায় বিক্রি হয় । আসলে ব্যাপারটা এত সহজ হলে স্মাগলাররা শুধু কয়েনই খুঁজে বেড়াতো । আসলে একটা কয়েন বিভিন্ন কারণে দামী হতে পারে । ক্রেতাকে আগডুম বাগডুম বুঝিয়ে গোছিয়ে দেয়া যেতে পারে, গবেষণা করার জন্য নির্দিষ্ট পিরিয়ডের কয়েন হতে পারে । 

ধরুন, কোন একটা গবেষণার জন্য বাংলার প্রাচীন কড়ি দরকার । এটা দেখতে কেমন ছিল ? সাইজ কতটুকু, এটা কারা ব্যবহার করতো, ইত্যাদি বিষয় জানার জন্য একটা কড়ি দরকার । এখন যেখান থেকে পারি, যত টাকা লাগুক, আমার কড়ি চাই । এখন যদি আপনি আমার কাছে মুঘল আমলের স্বর্ণমুদ্রা নিয়ে আসেন তাহলে সেটার চারআনার মুল্যও আমার কাছে নাই । যদিও সেটা স্বর্ণমুদ্রা কিন্তু আমার কাছে কড়িই সবচেয়ে দামী । আমার কাজের স্বার্থে সেই কড়ির জন্য যেকোনো মুল্য দিতে আমি প্রস্তুত । এভাবেই মূলত প্রাচীন কয়েনের দাম উঠা-নামা করে । 

আমাকে একজন ইনবক্সে বলেছিল তার পাকিস্তানি আমলের এক আনা দরকার কিন্তু সে কারো কাছে পাচ্ছে না । কয়েকজন দিয়েছিল কিন্তু সেই কয়েনের অবস্থা একেবারেই খারাপ । মোটামুটি ভালো একটা কয়েনের খোঁজ করেছিল । আমার বন্ধু লিস্টে যারা ছিল তারা কেউ হয়ত মনে করতে পারবেন কোভিডের আগে পোস্ট করেছিলাম পাকিস্তানি আনার জন্য । একজন আমাকে নক করেছিল । তার কাছে কয়েকটা পাকিস্তানি আনা ছিল । অনেক দামাদামির পর সেই সামান্য এক আনা বিক্রি হয়েছিল ২৫ হাজার টাকায় । ক্রেতার কাছে জেনেছিলাম সে রিসার্চ পেপারের জন্য সেই আনা কিনেছিল এবং অনলাইনে একটা একাডেমিক সাইটে বেশ ব্যয়বহুল দামে বিক্রি করেছিল । 

আশা করি, বুঝতে পারছেন কিভাবে একটা কয়েনের দাম বাড়ে কিংবা কমে । পুরো বিষয়টাই চাহিদা ও জোগানের আওতায় রয়েছে । কোভিড-১৯ এর আগে কয়েন বা বিভিন্ন মুদ্রা ক্রয়ের যতগুলি সাইট ছিল সব বন্ধ হয়েছে । যেখানে মানুষের জীবন থমকে গেছে সেখানে শখ পূরণ করা জরুরি নয় ।


কয়েন বিক্রি করার ক্ষেত্রে সতর্কতা-

বেশিদিন আগের নয়, কয়েক সপ্তাহ আগের কথা । আমাকে ফোন করেছিলেন একজন লোক যার কাছে বাংলাদেশী হলুদ রঙের বেশকিছু এক টাকার কয়েন রয়েছে এবং সে কিছু ভারতীয় সাইট থেকে জানতে পেরেছে একেকটা কয়েনের দাম লাখ টাকা । সেজন্য আমাকে নক করেছিল কয়েন বিক্রি করতে সাহায্য করার জন্য । এরপর তাকে নিচের তথ্য দিয়ে সতর্ক করি এবং সে ভুল বুঝতে পারে - 

মনে রাখবেন, মার্কেটে চলমান কোন কয়েন বিক্রি করার নুন্যতম চেষ্টা করলে আপনি মুদ্রা পাচার আইনে গ্রেফতার হবেন । যেকোনো দেশের কোন ব্যাংক নোট বা মুদ্রা যা প্রচলিত রয়েছে, সেগুলি ক্রয় বিক্রয় করা যাবে না । যদিও আমাদের বাজারে হলুদ মুদ্রা আগের মত দেখা যায় না কিন্তু সরকার এই মুদ্রা বাতিল করেনি বরং গ্রামের দিকে এই কয়েন যথেষ্ট পরিমানে দেখা যায় । এছাড়াও ২৫ পয়সা, ৫০ পয়সা এগুলিও সরকার বাতিল করেনি । আপনি যদি দোকানে এই মুদ্রা দেন এবং দোকানী নিতে অস্বীকার করে তাহলে আপনি আইনের আশ্রয় নিতে পারেন । সেজন্য একদম সতর্ক থাকতে হবে, যেকোনো মুদ্রা সংগ্রহ করা যেতেই পারে, কিন্তু বিক্রি করার ক্ষেত্রে সেই কয়েন বা নোটের বাজারের ভ্যালু জেনে তারপর অগ্রসর হতে হবে । 

"১৯৭২ সালের মুদ্রা আইন অনুযায়ী ১,৫,১০,২৫,৫০ পয়সাগুলি সরকার বাতিল করেনি । বরং কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে জানানো হয়েছে এগুলি বিনিময় যোগ্য এবং কেউ নিতে অস্বীকার করলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যাবে সংবিধান অনুসারে । কিন্তু জিনিসপত্রের অতিরিক্ত দাম এবং মুদ্রা বহন করার ক্ষেত্রে এর ওজনের দিকটা বিবেচনা করে অনেকেই এগুলি ব্যবহার করতে চায় না বিধায় আজকাল তেমন চোখে পড়ে না" 

আশা করি, বুঝতে পারছেন ১৯৭২ সাল থেকে প্রচলিত যেসব কয়েন যেমন ১ পয়সা, ৫ পয়সা, ১০ পয়সা, ২৫ পয়সা, ৫০ পয়সা এগুলি এখনো প্রচলিত । সুতরাং আপনি এগুলি কারো কাছে বিক্রি করার স্পর্ধা দেখাতে পারবেন না । এক পয়সা বিক্রি করলে আইনে যে অপরাধ হবে, অনেকগুলি কয়েন বিক্রি করলেও একই অপরাধ । 

আপনি যদি এসব পুরাতন কয়েন নিতে চান তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে যত খুশি নিতে পারবেন বলে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে । 


আশা করি, বুঝতে পেরেছেন পুরাতন কয়েন কেনা-বেচার ক্ষেত্রে কি কি শর্ত পালন করতে হবে এবং কিভাবে এগুলি বিক্রি করা যায় । এবং অবশ্যই কয়েন বিক্রিতে সাহায্য করার জন্য ইনবক্সে এসে আর অনুরোধ জানাবেন না এবং বিক্রি করে দিলে কমিশন দিবেন এরকম অফারও না করলেই খুশি হবো । যেহেতু পোস্ট আকারে সবকিছু জানিয়ে দিয়েছি সুতরাং সেভাবেই চেষ্টা করবেন যদি বিক্রি করতে চান এবং গুগল মামা  তো রয়েছেই । 






2 comments:

  1. Hitster is a fantastic online resource for music lovers. The website's extensive library and user-friendly interface make it easy to discover, listen to, and explore a wide range of music genres.

    https://hitster.fm/

    ReplyDelete

Powered by Blogger.